ওয়েব ডেস্ক: লোকসভায় নির্বাচনী সংশোধন প্রক্রিয়া (এসআইআর) নিয়ে আলোচনায় যোগ দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাহুল। মোদি সরকারের কাছে রাহুল তিনটি প্রশ্ন তোলেন—বিশেষত, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটি থেকে দেশের প্রধান বিচারপতিকে (সিজেআই) বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে।
রাহুলের কথায়, ‘‘কেন সিজেআই-কে নির্বাচন প্যানেল থেকে সরিয়ে দেওয়া হল? আমরা কি তাঁকে বিশ্বাস করি না?’’ তাঁর দাবি, নতুন আইনের ফলে কমিশনের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
নতুন আইনে বলা হয়েছে—সিইসি ও ইসি নিয়োগের কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রী মনোনীত একজন মন্ত্রী। এই কমিটির বৈঠক ডাকবেন প্রধানমন্ত্রীই। কমিটির সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার পর তিনিই নিয়োগের অনুমোদন দেবেন। এই বিধান নিয়েই শুরু থেকে আপত্তি কংগ্রেসের। রাহুল অভিযোগ করেন, তিনি কমিটিতে একমাত্র বিরোধী সদস্য; ফলে তাঁর মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে না।
মোদি সরকারের আনা আরও একটি আইন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রাহুল। ২০২৩ সালের ওই আইনের ১৬ নম্বর ধারায় সরকার নির্বাচন কমিশনারদের সরকারি ক্ষমতার বলে নেওয়া সিদ্ধান্তকে ‘সুরক্ষা’ দিয়েছে। রাহুলের প্রশ্ন—‘‘কেউ সরকারি পদে থেকে যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, তবে কেন তাঁকে শাস্তি দেওয়া যাবে না?’’
রাহুল আরও অভিযোগ করেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কর্মসূচির সঙ্গে মিলিয়ে। ভোটার জালিয়াতি ও সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ নিয়ে তাঁর প্রশ্নেরও কোনও সন্তোষজনক উত্তর দেয়নি নির্বাচন কমিশন—এমনটাই দাবি তাঁর। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘৪৫ দিন পর সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট করার অনুমতি কমিশনকে দেওয়া হল কেন? এর প্রয়োজনীয়তা কী?’’
শুধু প্রশ্ন তুলেই থেমে থাকেননি রাহুল; নির্বাচনী সংস্কারের জন্য চার দফা দাবি জানান তিনি—
- ভোটের অন্তত এক মাস আগে সব দলকে মেশিনে পাঠযোগ্য ভোটার তালিকা দেওয়ার দাবি।
- সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট করার অনুমতি দেওয়া আইন প্রত্যাহার।
- কমিশনকে ‘অতিরিক্ত ক্ষমতা’ প্রদানকারী আইন বাতিল।
- ইভিএমের উপাদান ও কার্যপ্রণালি বিশেষজ্ঞদের পরিদর্শনের অনুমতি।
রাহুলের অভিযোগ—ইভিএমের মাধ্যমে ভোট কারচুপি করছে বিজেপি।
সংসদীয় আলোচনায় ভুয়ো ভোটারের অভিযোগও ওঠে তাঁর মুখে। দাবি করেন, বিহারে এসআইআরের পরও ১.২ লক্ষ ‘ডুপ্লিকেট’ ভোটারের ছবি ও নাম থেকে গিয়েছে। একইভাবে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের ভোটেও জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর। রাহুল বলেন, ‘‘ভোটচুরির থেকে বড় দেশবিরোধী কাজ আর কিছু হতে পারে না।’’
হরিয়ানার ভোটার তালিকায় ব্রাজিলের এক মডেলের ছবি ২২ বার ব্যবহার হওয়ার অভিযোগও পুনর্ব্যক্ত করেন রাহুল। তাঁর দাবি—‘‘আমি বহুবার এই কথা বলেছি, কিন্তু কমিশন কোনও উত্তর দেয়নি।’’




