কলকাতা: তাঁর প্রেম ভরা চাহুনি, হেয়ার স্টাইল নিমেষে ঝড় তুলত নারী হৃদয়ে। আর পুরুষরা মনপ্রাণ ঢেলে ফলো করতেন উত্তম-স্টাইল। সেই মহানায়কের মৃত্যুর পর দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে ৪৪টা বছর। তবে আজও, উত্তম কুমারের (Uttam Kumar) সিনেমা মানে যেন আলাদা আকর্ষণ। উত্তম যুগ হয়তো এভাবেই থেকে যাবে সারা জীবন।
২৩ জুলাই ১৯৮০, সলিল দত্ত পরিচালিত ওগো বধূ সুন্দরী ছবির শেষ দিনেক শুটিং চলছিল তখন। ছবিতে উত্তম কুমারের স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়। রাগ করে তিনি বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছেন, এমন ছিল দৃশ্য। ছবিতে দাড়ি কামাতে কামাতে বার বার স্ত্রীকে আটকানোর চেষ্টা করছেন। শেষমেশ না পেরে তিনি সুর চড়ান। এ ভাবেই শেষ হবে দৃশ্য। শেষ সংলাপ বলার সময়ই বুকের মাঝে হাত চলে যায় উত্তমের। সে সময় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু তাঁর সংলাপ বলার ভঙ্গি, অভিনয়, স্বরক্ষেপণ শুনে কারও বোঝার সাধ্য ছিল না। মাত্র এক দিনের মধ্যেই সব শেষ হয়ে যায়। ২৪ জুলাই মধ্য কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে আর ফেরা হয়নি তাঁর।
উত্তম কুমার ছিলেন একাধারে অভিনেতা, সুরকার, প্রযোজক ও পরিচালক। তাঁর চলচ্চিত্রজীবন ৩০ বছরের। এই সময়টাতে তিনি অভিনয় করেছেন প্রায় ২০১টি ছবিতে। তাঁর বিপরীতে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ৩৫ জন অভিনেত্রী। সুচিত্রা সেনের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ২৯টি ছবিতে। তবে সর্বাধিক ৩২টি ছবিতে অভিনয় করেছেন সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে। চলচ্চিত্র ছাড়াও অভিনয় করেছেন মঞ্চে ও যাত্রায়। এ ছাড়া পরিচালনা করেছেন পাঁচটি ছবি, সুরারোপ করেছেন দুটিতে আর প্রযোজনা করেছেন সাতটি ছবি। ‘হ্রদ’, ‘হারানো সুর’, ‘সপ্তপদী’, ‘নায়ক’, ‘চিড়িয়াখানা’, ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’, ‘গৃহদাহ’, ‘এখানে পিঞ্জর’, ‘স্ত্রী’, ‘অমানুষ’, ‘বহ্নিশিখা’ ও ‘আনন্দ আশ্রম’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য তিনি পেয়েছেন বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, সার্টিফিকেট অব মেরিট, ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, সাংস্কৃতিক সাংবাদিক সংস্থা, প্রসাদ পত্রিকা ও ভরত পুরস্কার।