সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) নামটা শুনলেই, কেমন একটা ভালো লাগা শুরু হয়ে যায়। কারণ, বাংলা সিনেমা আর বাঙালির সংমিশ্রণ আজ পর্যন্ত সত্যজিৎ রায় যা করেছেন তা এখনও যেন বহন করে চলেছে বাঙালি। সোনার কেল্লা, বাইসেপ একটার পর একটা ডায়লগ, রেল গাড়ি দেখতে ছুটে যাওয়ার দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কানে বেজে ওঠে বিখ্যাত বিখ্যাত ডায়লগ।
আর আজ ২ মে। সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন। সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে অস্কারজয়ী বিখ্যাত জাপানি চলচ্চিত্র নির্মাতা আকিরা কুরোসাওয়া বলেছিলেন, ‘রায়ের চলচ্চিত্র না দেখার বিষয়টি এমন যে, আপনি পৃথিবীতে বসবাস করছেন, অথচ সূর্য বা চাঁদ দেখেনি।’
তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ৮০ টাকার বিজ্ঞাপন সংস্থার চাকরি থেকে। ভিজ্যুয়াল ডিজাইনার ছিলেন। তারপর একটি প্রকাশনা সংস্থার জন্য বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাইন করা শুরু করেন। তাঁর হাত থেকেই বেরোয় অনবদ্য কিছু প্রচ্ছদ। ইলাস্ট্রেশন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’-র ছোটদের জন্য সংস্করণ ‘আম আঁটির ভেঁপু’ র প্রচ্ছদের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তখনই মনে মনে ঠিক করে ফেলেছিলেন, সুযোগ পেলে এই গল্প নিয়ে ছবি বানাবেন। সেই স্বপ্ন থেকেই চিদানন্দ দাশগুপ্ত ও আরও কয়েকজনের সঙ্গে মিলে সত্যজিৎ খুলে ফেলেন ‘ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি’। বহু বিদেশি ছবির স্ক্রিনিং করালেন। কিন্তু সত্যজিৎ রায় ঠিক করলেন তাঁকে গল্প বলতে হবে। নিজের মতো করে বলতে হবে। নিজের জন্য বলতে হবে। বিদেশে যেতে হয়েছিল কোম্পানির জন্য। তারপর কলকাতায় ফিরে শুরু করলেন ‘পথের পাঁচালী’ বানানোর কাজ। কিন্তু অর্থের অভাবে বহু বছর ধরে চলে পথের পাঁচালি বানানো। তারপর বাকিটা ইতিহাস…
অপু ট্রিলজি, প্রতিদ্বন্দ্বী, অশনি সংকেত, গুপী গাইন বাঘা বাইন, ফেলুদা, নায়ক–সবকটা ছবি-ই একে অপরের থেকে ভিন্ন। তারপর এলো ফেলদা। যা আজও বাঙালি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখে দিয়েছে। কারণ, ফেলুদা বাঙালির বড় আপন, মনের মধ্যে থাকেন।
আর সত্যজিৎ রায়ের নায়ক…স্তব্ধ করে দেয় চিত্রনাট্য আর ডায়লগে। তবে সত্যজিৎ রায়ের ছবি সফল হওয়ার চাবিকাঠি তাঁর কাস্টিং। ‘পথের পাঁচালী’র অপু, ‘ফেলুদা’র লালমোহন বাবু, চিত্রনাট্য লেখার সময় তিনি যেন তাঁর চরিত্র গুলোকে দেখতে পেতেন। তিনি ভাল অভিনেতা খুঁজেতেন না। তাঁর শব্দ দিয়ে আঁকা স্কেচ-এর সঙ্গে, কার শরীরী ভাষা, মুখের মিল সবচেয়ে বেশি, সেটাই দেখতেন। কারণ অভিনয় করিয়ে নেওয়ার মুন্সিয়ানা তাঁর জানা ছিল। তাই সত্যজিৎ রায় মানেই নস্ট্যালজিয়া, বাংলা ছবি, মনে গেঁথে যাওয়ার মতো চিত্রনাট্য, ডায়লগ আর বাংলা ছবির নবজন্ম।